নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ঐতিহাসিক আলতাদিঘীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য
অবর্ণনীয়। মন ভোলানো ঐতিহ্যবাহী এই দিঘী ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে মাত্র
৪কিলোমিটার উত্তরে গভীর শাল বনের মাঝে অবস্থিত। ১ কিলোমিার লম্বা আর অর্ধ
কিলোমিটার চওড়া এ দিঘীর পূর্বের হাল এখন অনেক কমে গেছে। তবে এর চার ধারে বন
বিভাগের সাজানো গোছানো বৃক্ষ রাজি ও তার পরেই রয়েছে প্রাকৃতিক শালবন এবং
দিঘীর উত্তর সীমানা ধরে ভারত বাংলা ভাগের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ও
ভারতীয় কাঁটা তারের বেড়া যে কোন পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। অল্প
কিছুদেনর মধ্যে ধামইরহাটের এই ঐতিহাসিক আলতাদিঘী এবং শালবন জাতীয় উদ্যানে
রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে।প্রবাদ আছে, অত্র এলাকায় প্রবল খরার কারণে প্রজা
সাধারন পানি ও পানীয় জলের কষ্ট লাঘবের জন্য রাজমাতার কাছে অভিযোগ করে। পরে
রাজমাতা তাঁর পুত্রের কাছে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং পুত্রের কাছে দাবী
করেন “বাবা আমি সকালে উঠে যতদুর পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবো ততখানি লম্বা
একটি দিঘী খনন করে দিতে হবে”। বৃদ্ধা মাতার কথায় পুত্র রাজী হয়ে গেলেন।
দিঘী খনন শুরু হয়ে গেল ঢাক ঢোল পিটিয়ে। রাজমাতা হাঁটতে শুরু করেছেন লাঠি
ঢোকা দিয়ে হেঁটেই চলেছেন। তিনি আর থামেন না। চলেছেন তো চলেছেন। উজির
নাজিরের চক্ষু ছানাবড়া। এত লম্বা দিঘী খনন করা কি সম্ভব! সব রাজ ভান্ডার যে
শূন্য হয়ে যাবে। তাই উজির নাজির তাৎক্ষনিক বুদ্ধি আটলেন রাজমাতাকে ঠেকাতে
হবে। এমনি বাধা দিয়ে তাকে থামানো যাবে না। তাই তার চলার পথে ঘাষের উপর কিছু
আলতা ঢেলে দিয়ে ক্লান্ত রাজমাতাকে বলা হলো বুড়ি মা আপনার পা কেটে গেছে।
আপনি ক্লান্ত আপনি আর হাঁটতে পারবেন না, তাই আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন।
রাজমাতা অবসন্ন দেহে বসে পড়লেন- তাই তো পা কেটে গেছে। শেষে রাজমাতাকে
ধরাধরি করে রাজপ্রসাদে নিয়ে যাওয়া হলো এভাবে দীর্ঘ ১ কিলোমিটার লম্বা দিঘী
খনন করা হলো। প্রজারা ও উপকৃত হলো দিঘীর জল পেয়ে। এভাবেই আলতাদিঘীর জন্ম
হলো। দিঘীর চারধারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কে বৃদ্ধি করেছে জন্ম গজারি বা
শাল গাছের জঙ্গল। এই জঙ্গলে এক সময় বাঘ, ভাল্লুক ও হরিণ বাস করতো। বন
বিভাগের জরিপে দেখা গেছে, এই উপজেলার প্রায় ১ হাজার দুই শত বিঘা বন বিভাগের
জমি রয়েছে, তার মধ্যে সাড়ে ৪শত বিঘা জমিতে বন রয়েছ্ েএই দিঘীকে ঘিরে যা
সংরক্ষনের অভাবে এর সৌর্ন্দয্য হানি ঘটেছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে সেই সময় কোর বা
কারিতালের সহায়তায় দিঘীর সংরক্ষন করা হয়। তার পর ১৯৮০ সালে দিঘী মৎস্য
বিভাগ তার দায়িত্বে গ্রহণ করে। তার পর ১৯৯০ সালের দিকে বন বিভাগ তার
চারধারে চারা লাগিয়ে এর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং মৎস্য অধিদপ্তর মাছ
চাষের জন্য প্রতি বছর মেয়াদী মোটা অংকের বিনিময়ে লিজ দিয়ে থাবেক।প্রতি বছর
এই আলতাদিঘীকে কেন্দ্র বনভোজনের উৎসব লেগেই থাকে। কিন্তু দিঘীর প্রবেশ পথ
খালি পাকা করনের অভাবে বর্ষা মৌসুমে এই সড়ক পথে যাতায়াত বন্ধ থাকে।
ইতিমধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী এই আলতাদিঘীকে পিকনিক গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের
ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এর ফলশ্রতিতে ২০১১-১২ অর্থ বছরে তা
বাস্তবায়ন হবে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ধামইরহাট বনবিট
কর্মকর্তা জানান, ধামইরহাট-পত্নীতলার মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ
শহীদুজ্জামান সরকারের ঐকান্তিক জোর প্রচেষ্টায় সম্প্রতি কিছুদিন পূর্বে
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক আলতাদিঘীকে “জাতীয়
উদ্যান” এ রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারীভাবে গ্রহণ করেছেন।
আলতীদিঘীর সৌন্দর্য্য রাশি যে একবার দেখেছে তার মনে থাকে বেশ কিছু দিন ধরে।
আলতাদিঘী এই উপজেলা তথা নওগাঁর জেলার অপার সৌন্দর্য্যে এক মুর্তিমান
নীলাভূমি একে আরও আকর্ষর্ণীয় করে তুলতে পারলে এই জেলা পর্যটন শিল্পে আরও
একধাপ এগিয়ে যাবে।
Post a Comment